How to cure Diabetes( বহুমুত্র ) with the help of Yoga | Explained in Bengali

বহুমুত্র ( ডায়াবীটিজ )

বহুমূত্র রােগটি সংক্রামক নয় বটে , কিন্তু এ রােগটি অতি সাংঘাতিক । ইহা মানুষকে তিলে তিলে ধ্বংস করে জীবনী – শক্তি ও কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয় । এ রোগ হলে বিপদের সম্ভাবনা থাকে । এর সঙ্গে দেহে কোন ঘা বা ফোড়া হলে তা সহসা সারতে চায় না ; অনেকের সামান্য ঘা মারাত্মক রূপ ধারণ করে , এমন কি সামান্য ঘায়ে জীবন – দীপ পর্যন্ত নির্বাপিত হয় । এ রােগ হলে প্রস্রাবের সঙ্গে চিনি ( শর্করা ) নির্গত হয় । খাদ্য – বস্তু হতে উদ্বৃত্ত শর্করা দেহে রক্ষিত হয় না , উহা প্রস্রাবের সঙ্গে নির্গত হয় যার জন্য দেহের ভাপ রক্ষিত হয় না এবং কর্মক্ষমতা কমে যায় । আমাদের প্যাংক্ৰিয়াস ( সূর্য গ্রন্থি ) হতে ইনসুলিন নামক এক প্রকার রস নিঃসরিত হয় । আমরা যা খাই সেই খাদ্য – বস্তু হতে শর্করা ( চিনি ) যা উদ্ভ হয় , ইনসুলিন উহা দেহে মজুত করে , যার ফলে দেহে তাপ রক্ষিত হয় ও কর্মক্ষমতা বাড়ে । এই ইনসুলিন ঠিক ভাবে বা পরিমিত ভাবে নিঃসরিত না হলেই আমাদের গ্রহণ করা খাদ্য – বস্তু হতে যে শর্কর উত্ত হয় উহ দেহে রক্ষিত না হয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে নির্গত হয় । প্রস্রাবের সঙ্গে অস্বাভাবিক শর্করা নির্গত হওয়াই হল বহুমূত্র বা ডায়াবীটিজ ।
এই রােগ একটি সাংঘাতিক রােগ । নানারূপ চিকিংস । দ্বারা ইহা নিরাময় করতে চো করলেও চিরতরে নিরাময় হয় না যে পর্যন্ত ঠিকভাবে ইনসুলিন বস নিঃসরিত হয় ও পায়খানা ভালভাবে পরিষ্কার না হয় । যদিও আধুনিক যুগে চিনি জাতীয় খাগ , ভাত প্রভৃতি না খেতে দিয়ে ইনসুলিন ইনজেকসন দ্বারা রােগীর চিকিৎসা করা হয় , কিন্তু তাতে দেখা যায় যত দিন ঐরূপ খাদ্য খেতে দেওয়া না হয় ও ইনজেকসন দেওয়া হয় ততদিন রােগী ভাল থাকে ; কিন্তু ইনজেকশন দেওয়া বন্ধ হলেই আবার পূর্ববৎ এ রােগ হয়ে থাকে । এ রােগ সারাতে হলে প্রথমেই প্রয়ােজন রােগীকে সাধ্য ও সহমত কায়িক শ্রম করান । আহারাদি ব্যাপারে সংযম ও নিয়মিত আসন অভ্যাস দ্বারা যাতে ঠিক ভাবে হজমশক্তি বাড়ে এবং ইনসুলিন রস ঠিকভাবে নিঃসরিত হয় তার ব্যবস্থা করা দরকার । রোগ সাময়িক ভাবে চাপা দেবার চেষ্টা করা ভুল । এই বহুমূত্র রােগ দুই প্রকার । শুধু যে প্রস্রাবের সঙ্গে অস্বাভাবিক ভাবে শর্করা নির্গত হলেই বহুমূত্র হয় , তা নয় । শর্করা নির্গত না হলেও বহুমূত্র রােগ হতে পারে । শর্করাবিহীন বহু মূত্রকে মূত্রাতিসার বলে । প্রস্রাবের সঙ্গে শর্করা নির্গত হলে যত ক্ষতিকারক , শর্করাবিহীন বহুমূত্র ( মূত্ৰাতিসার ) তত ক্ষতিকর নহে ।

লক্ষণ

মূত্রের সঙ্গে চিনি জাতীয় জিনিষ ( শর্করা ) নির্গত হয় এবং যে স্থানে মূত্র ত্যাগ করা হয় ঐ স্থানে পিপড়ের সমাবেশ হয় । ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ , ঘন ঘন পিপাসা , মুখে মিষ্টি স্বাদ অনুভূত হওয়া , সময় সময় গায়ে চুলকানি হওয়া , অনিদ্রা ও দুর্বলতা বোধ করা , কোষ্ঠবদ্ধতা বা কোষ্ঠ তারল্য হওয়া । এই রােগের কঠিন অবস্থায় মাথা ঘােরা , মাথা ধরা , দুর্বলতা এমন কি মূত্রাশয়ে প্রদাহ প্রভৃতি উপসর্গেরও সৃষ্টি হয় । এই কয়টা লক্ষণ দেখা দিলেই অত্যন্ত সাবধান হওয়া উচিত । কারণ এই রােগ হতে আরও নানারকম রােগের সৃষ্টি হয় । প্রথম হতে সতর্ক হলে এ রোগ নিরাময় করা যত সহজসাধ্য হয় , রােগ খুব বৃদ্ধি পেলে তত সহজ হয় না । শুধু এই রােগের বেলাই নয় , সমস্ত রােগের বেলাই তাই । এই রােগের আর একটি লক্ষণ হল দাতগুলি ফ্যাকাসে ও গাত্রচর্ম শুষ্ক হয়ে যায় । এ রােগ দুরারােগ্য পেটের রােগের মতই মারাত্মক । কিন্তু যৌগিক নিয়ম ও আসন দ্বারা এই দুইটি রােগই চিরতরে নিরাময় করা যায় । তবে ফল ধীরে ধীরে হয় এবং একেবারে নিমূল করে নিরাম করতে একটু সময়ের প্রয়ােজন ; ২৪ দিনে নিরাময় হয় না । তবে মাস খানেকের মধ্যেই কিছুটা ফল পাওয়া যায় । কেউ বা এক মাসের মধ্যে একেবারে নিরাময় হয়ে থাকে । এরূপ অসংখ্য রােগী আমার নির্দেশে আনাদি দ্বারা চমৎকার ভাবে আরােগ্য লাভ করছে । এখনও বহু রােগী আমার চিকিৎসাধীন আছে । এখানে আর একটি কথা বলা দরকার — এই বহুমূত্র রােগ হৃদরােগ ও চোখে ছানিপড়া ইত্যাদি নানাপ্রকার মারাত্মক রােগের প্রধান কারণ । এ রােগ নিজেও যেমন সর্বনাশকারী , তেমনই আবার অন্যান্য গুরুতর য়ােগ সৃষ্টি করতেও ওস্তাদ । এ ছাড়া বহুমূত্র হলে ঘনঘন পিপাসা হয় । পিপাসার দরুণ ঘন ঘন জলও পান করতে হয় , জলপান করলেই রক্ত চিনি তরল হয়ে জলের সঙ্গে মিশে প্রস্রাব রূপে বেরিয়ে যায় । খাদ্য – বস্তু হতে উদ্বৃত্ত চিনি যা দেহে রক্ষিত হয়ে ঠিকভাবে বণ্টন হয়ে প্রয়ােজন মত দেহের মধ্যে সরবরাহ হয়ে দেহের তাপ , ও , স্নায়ু – দেহ পেশী ও জীবনীশক্তিকে অটুট রাখে । কিন্তু সূর্য গ্রন্থি দুর্বল হয়ে যদি ঠিকভাবে ইন্সুলিন নির্গত না হয় , তাহলে আমাদের গৃহীত খাদ্য – বস্তু হতে যে চিনি উৎপন্ন হয় উহা যকৃতের কোষে সঞ্চিত না হয়ে রক্তে মিশে রক্তের ক্ষারভাগ নষ্ট করে দেয় ; তার ফলে দেহে বিশুদ্ধ রক্ত পায় না , দেহ দুর্বল হতে থাকে । রােগ প্রতিষেধক ক্ষমতাও থাকে না । এই রক্ত হতে ঐ বিষাক্ত শর্করাকে বের করে দিতে দেহ প্রকৃতির জলের প্রয়ােজন হয় , যার জন্য অস্বাভাবিক পিপাসা হয় । আবার সময় সময় জিভ ও মুখ শুকিয়ে উঠে । খাদ্য – বস্তু হতে উক্ত শর্করা যকৃতের কোষে সঞ্চিত হলে উহা রক্তে মিশে রক্তকে ও দেহকে বিষাক্ত করে । উহা বেরিয়ে যাওয়াই ভাল , কিন্তু যাতে উহা যকৃতের কোষে সঞ্চিত হয় ও ঠিকভাবে ইন্সুলিন নির্গত হয় তারই ব্যবস্থা করা সর্ব প্রথম প্রয়োজন । সূর্যগ্রন্থি সক্রিয় হলে ও ইন্সুলিন ঠিক ভাবে নিঃসরিত হলে দেহাভ্যন্তরে খাদ্য – বস্তু হতে উদ্বৃত্ত শর্করা যকৃতের কোষে সঞ্চিত হয় ও ঠিকভাবে বণ্টনও হয় , বহুমূত্র রােগ হতেও পারে না , হলেও দ্রুত নিরাময় হয় । এই বহুমূত্র রােগ যে কারণে হয় , তাহা হতে সতর্ক থাকলেই এ রােগ হতে পারে না — হলেও বেশীদিন থাকতে পারে না । এ রােগ নানা কারণেই হতে পারে , তার মধ্যে কয়েকটি সংক্ষিপ্ত কারণ নীচে দেওয়া হল ।

রোগের কারণ

অতিরিক্ত ভােজন , অতিরিক্ত শর্করা – জাতীয় খাদ্য গ্রহণ , তেমন ভাবে প্রয়ােজন মত কায়িক শ্রম না করা , অধিক মানসিক চিন্তা করা , কায়িক শ্রম না করে কেবল শুধু মগজ পরিচালনা করা ; অতিরিক্ত বীর্যক্ষয়ের জন্য এবং দাম্পত্য – জীবনে উচ্ছলতার জন্যও এ রােগ হয় । অতিরিক্ত চা পান করলে অথবা প্রত্যহ বা একটানা অধিক দিন রসগােল্লা , সন্দেশ , ক্ষীর প্রভৃতি আহার করলেও এই রােগের সৃষ্টি হয়ে থাকে । এছাড়া অতিরিক্ত মাছ , অধিক মসলাযুক্ত মাংস , ভেজাল ঘি , ডিমের তরকারী বা অধিক সিদ্ধ ডিম , অতিরিক্ত ডাল প্রভৃতি আহারের জন্যও যকৃতের দুর্বলতা হেতু এ রােগের উৎপত্তি হতে পারে । এই ধরণের খাদ্য বেশী খেলে ও ঠিকভাবে হজম করতে না পারলে এ রােগ হবার বিশেষ সম্ভাবনা । আমাদের দেহস্থ সূর্য গ্রন্থি আহারের দোষেই দুর্বল হয় । এই সূর্যগ্রন্থি দুর্বল না হলে কিছুতেই বহুমূত্র রােগ হতে পারে না । এই সূর্যগ্রন্থিকেই প্যাংক্ৰিয়াস বলা হয় । এই সূর্যগ্রন্থি বা অগ্ন্যাশয়ের অন্তর্মুখী রসকে ইংরেজীতে ইনসুলিন বলা হয় । বর্তমানে এই রােগ হলে ইনসুলিন ইনজেকশন দিয়ে রােগকে সাময়িকভাবে চাপা দেওয়া হয় , কিন্তু যাতে সূর্যগ্রন্থি প্রবল হয় ও ঠিকভাবে ইন্সুলিন নিঃসরণ হয় তার কোন ব্যবস্থাই করা হয় না । অগ্নিগ্রন্থির অন্তর্গত এই সূর্যগ্রন্থির ও যকৃৎ প্রবল বা সবল সক্রিয় হলেই এ রােগ থাকতেও পারে না , হতেও পারে না । উপরােক্ত ভাবে , আহারাদিতে সংযম রক্ষা না করাই যকৃৎ ও অগ্ন্যাশয়ের দুর্বলতার কারণ । এই যকৃৎ ও অগ্ন্যাশয় দুর্বল না হলে এ রােগ হতে পারে না । আবার অনেক সময় মূত্রাশয় আহত হলেও মূত্রাশয়ের আহত স্থান দিয়ে কোষ হতে চিনি প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায় । এতে অনেকেই বহুমুত্রের চিকিৎসা করে থাকে , কিন্তু এটা বহুমূত্র নয় । মূত্রাশয় আহত হওয়ার জন্য প্রস্রাবে শর্করা পাওয়া যায় বলে অনেকেই একে বহুমূত্র মনে করে বহুমূত্রের চিকিৎসা করে রােগীর সর্বনাশ করে থাকে ।

নিরাময়ের উপায় 

এ রোগের যে কোন প্রজার লক্ষণ টের পেলে অথবা রােগ হয়েছে বুঝতে পারলেই আহারাদি বিষয় সংযত হয়ে শর্করা জাতীয় আহার্য বর্জন করে নিয়মিত ভাবে দুই বেলা আসন – মুদ্রা করলেই অল্প রােগ নিরাময় হবে সন্দেহ নাই । আর এ বােগ হয়েছে বলে সন্দেহ হলে যদি কোন লক্ষণ পাওয়া না যায় তাহলে প্রস্রাব পীকা করাই বুদ্ধিমানের কাজ । এ রােগ কম হউক বেশী হউক , প্রত্যেকেই এ রােগ দূর করার জন্য বিশেষ যত্নবান হওয়া উচিত ।
প্রত্যহ সকালে শয্যাত্যাগের পরই এক গ্লাস জল পান করে মলাদি ত্যাগে পর শঙ্খমুদ্রা । যাদের শয্যাত্যাগের পর জলপান করলে মলত্যাগের বেগ হয় না , তাদের পক্ষে ঘুম ভাঙ্গলেই শয্যায় শুয়ে পবন মুক্তাসন করে ২/৩ মি : পর এক গ্লাস জল পান করা উচিত । তারপর মলত্যাগ তেমন ভাবে হউক বা না হউক , শেষে শঙ্খমুদ্রা বা মলশুদ্ধি অবশ্য করণীয় ।
মলাদি ত্যাগের পর হাত মুখ ধুয়ে বিপরীতকরণী , মৎস্যাসন , জানুশিরাসন , অর্ধকুর্মাসন , শশকাসন , অগ্নিসার বৌতি , সর্বাঙ্গাসন ; সন্ধ্যায় – পশ্চিমােত্তানাসন , অর্ধকূর্মাসন , শশকাসন , অগ্নিসার ধৌতি অথবা হলাসন , জানুশিরাসন , অর্ধকুর্মাসন , অগ্নিসার ধৌতি । দক্ষিণ নাসায় শ্বাস বহনকালে দুই বেলা পুর্ণ আহার গ্রহণ ও আহারান্তে বজ্রাসনে বসে ৮১০ বার শীতলীকুম্ভক করে শবাসন এবং পূর্ণ আহারের পত্ন অন্তত আধ ঘণ্টা হতে এক ঘণ্টা দক্ষিণ নাসায় শ্বাস প্রবল রাখা । হলে সকাল সন্ধ্যায় বা একবেলা মুক্ত স্থানে ভ্রমণ ।

উপসংহার

এই শৈল্পিক ব্লগে প্রতিটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন বেশিরভাগ অধ্যাপক এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং নার্সরা পরামর্শ দিয়েছেন।

দ্রষ্টব্য: এই ব্লগে প্রদত্ত তথ্য এবং অন্যান্য লিখিত সামগ্রী, বা কোনও লিঙ্কযুক্ত উপকরণগুলিকে না চিকিত্সার পরামর্শ হিসাবে চিহ্নিত করা উচিত, না পেশাদার তথ্য বিশেষজ্ঞের বা চিকিত্সার জন্য তথ্য বিকল্প নয়, এটি কেবল একটি সাধারণ সচেতনতা এবং শিক্ষামূলক তথ্য ।

Leave a Comment